দুটি অভিযোগে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি

Sayeediমুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আট ও ১০ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেন। এটি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তৃতীয় ও এই ট্রাইব্যুনাল থেকে দেওয়া প্রথম রায়। রায় ছিল ১২০ পৃষ্ঠার।

বেলা ১১টা ১০ মিনিটে বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এজলাসে বসেন।
১২০ পৃষ্ঠার রায় পড়ার শুরুতেই বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর বলেন, ‘দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পরিচয় সারা দেশের মানুষ জানেন। কিন্তু তাঁর বর্তমানের যে পরিচয়, সে পরিচয়ে আমরা কোনো বিচার করছি না। ১৯৭১ সালে তাঁর বয়স ছিল ৩০ বছর। সাক্ষীদের সাক্ষ্য থেকে জানা গেছে, তিনি রাজাকারদের কোনো কমান্ডার ছিলেন না। তিনি রাজাকার বাহিনীর একজন সাধারণ সদস্য ছিলেন। উর্দু ভাষা জানার কারণে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক তৈরি হয়। তাই তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে প্রতিটি অভিযানে অংশ নিতেন। তাঁর গ্রাম ছিল পিরোজপুরের সাউদখালিতে। তাঁর বিরুদ্ধে যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাঁরা ওই গ্রামের নিরীহ সাধারণ মানুষ।
তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে ২৮ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন ১৭ জন। সাক্ষীদের সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে আমরা রায় ঘোষণা করছি।’

একাত্তরের আগে ছিলেন মুদি দোকানদার ও তাবিজ বিক্রেতা। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে হয়ে গেলেন প্রথমে শান্তি কমিটির সদস্য ও পরে রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার। নিজে জড়িত থেকে, নেতৃত্ব বা সহযোগিতা দিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং রাজাকার বাহিনী নিয়ে সংঘটিত করলেন হত্যাযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ, লুট, ধর্ষণসহ জঘণ্যতম মানবতাবিরোধী নানা অপরাধ। আগের ‘দেইল্লা’ নামের সঙ্গে তাই রাজাকার যুক্ত হয়ে তাই কুখ্যাত হলেন ‘দেইল্লা রাজাকার’ নামে।

২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলা করা হয় সাঈদীর বিরুদ্ধে। এই মামলার বিচার শুরু হয় প্রথম, যুক্তি উপস্থাপনও শেষ হয় প্রথম। তবে ২০১২ সালের ২২ মার্চ গঠিত ট্রাইব্যুনাল-২ ইতিমধ্যে দুটি মামলার রায় দিয়েছেন। এর মধ্যে গত ২১ জানুয়ারি জামায়াতের সাবেক সদস্য আবুল কালাম আযাদকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের তৃতীয় রায়।
সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলেছে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে, রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষকে দুই দফায় যুক্তি উপস্থাপন করতে হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন অন্যান্য মামলার তুলনায় এটিতে সাক্ষীর সংখ্যাও বেশি।

ট্রাইব্যুনালের প্রথম মামলা: ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গ্রেপ্তার হন। ওই বছরের ২১ জুলাই সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। ২ নভেম্বর তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২০১১ সালের ১১ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষ সাঈদীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। ৩ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল তাঁর বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগ গঠন করে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করেন।

২০ অভিযোগ: আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর ৩(২) ধারায় সাঈদীর বিরুদ্ধে যে ২০টি অভিযোগ গঠন করা হয়, তার মধ্যে রয়েছে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা (জেনোসাইড) ও বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন এবং তাতে সহযোগিতা করা। মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোর মধ্যে রয়েছে হত্যা, অপহরণ, আটক রাখা, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ও ধর্মান্তর করা এবং এ ধরনের অপরাধে সহযোগিতা করা।

Source: Prothom-alo, Bdnews24